ভালবাসার_রং_বদলায় কারণে অকারণে
ডিভোর্স লেটারটা হাতে নিয়ে অনেকক্ষণ চুপচাপ বসে ছিলাম। পাঁচ বছরের সম্পর্কে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে তবেই আমরা একে অপরকে পেয়েছি। বাবা মা কখনোই বেকার ছেলের সাথে মেয়ের বিয়ে দেওয়ার পক্ষে ছিলোনা।কিন্তু আমার জেদের কাছে হার মেনে আমাকে সোহানের হাতে তুলে দিলো। প্রথম প্রথম সব কিছুই ঠিক ছিলো।শাশুড়ী মা আমায় অপছন্দ করলেও আমার বরের সামনে কখনো কিছু বলতে পারেনি।আমিও খুব খুশিই ছিলাম তাকে নিয়ে। বিয়ের ছয় মাসের মাথায় তার একটা কোম্পানিতে চাকুরী হলে।সেদিন সোহান খুব খুশি ছিলো।নতুন চাকুরী উপলক্ষে সারাটা দিন আমরা দুজনে রিক্সায় ঘুরেছিলাম। সোহান সেদিন আমার হাত ধরে বলেছিলো নিশি আজ থেকে আমাদের কষ্টের দিন শেষ। তুমি আজ যা চাইবে আমি তোমাকে তাই দিবো।আমি তাঁর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলেছিলাম তোমাকে ছাড়া আমার আর কিছুই চাইনা।আমার এই কথা শুনে সোহান আমার কপালে ভালোবাসার পরশ একে দিয়েছিলো।প্রথম স্যালারি পাওয়ার পর সে আমার জন্য একটা নীল শাড়ি নিয়ে এসেছিলো।সেই শাড়ি পেয়ে আমার খুশির সীমা ছিলোনা।মা বাবাকে ফোন দিয়ে বলেছিলাম তাদের জামাই প্রথম বেতন পেয়ে আমার জন্য উপহার নিয়ে এসেছে।মা সেদিন প্রতিত্তোরে বলেছিলো সারাজীবন স্বামী সোহাগে সুখি হ মা।কিন্তু বেশিদিন সেই সুখ আমার কপালে সয়নি।চাকরির সুবাদে প্রায়শই মেয়েদের সঙ্গে মিশতে হতো তার।আমি কখনো তাকে সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখিনি।একটা সময় প্রায় রাত করে বাসায় ফিরতো।আমি জানতে চাইলে বলতো অফিসের কাজের চাপ,তাই রাত করে বাসায় ফিরে। বাসায় যতোটুকু সময় থাকতো প্রায় ফোন নিয়ে বিজি থাকতো।আমাকে আর আগের মতে সময় দিতোনা।আমি অভিযোগ করলে বিরক্ত হয়ে বলতো সারাদিনতো বাসায় শুয়ে বসে থাকো, টাকা উপার্জন করার কষ্ট তুমি কি বুঝবে।আমি মনকে এই বলে সায় দিতাম, হয়তো কাজের চাপ বেশি তাই আমায় সময় দিতে পারছেনা।কিন্তু গত পরশু ছিলো আমাদের দ্বিতীয় বিবাহ বার্ষিকী। আমি সেজেগুজে তার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।এমন সময় সে বাসায় ফিরলো তবে সঙ্গে একজন মেয়েকে নিয়ে। আমি পরিচয় জানতে চাইলে সে বললো এই মেয়েটিকে নাকি সে ভালোবাসে।আমার সঙ্গে তার আর থাকা সম্ভব নয়। আমি যেনো তাকে ডিভোর্স দিয়ে চলে যাই।তার মুখে এসব কথা শোনার পর আমি আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিনি সোজা পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটিকে ঘর থেকে যেইনা বাহিরে বের করে দিতে গেলাম।সোহান জীবনে প্রথমবারের মতো আমার গায় হাত তুললো।রাগেক্ষোভে এই দুটো দিন আর তার সাথে কথা বলিনি।একটু আগেই সে আমার সামনে এসে ডিভোর্স পেপার দিয়ে বললো এতে আমি সাইন করে দিয়েছি।এখন তুমিও তাড়াতাড়ি সাইন করে এই বাড়ি থেকে বিদায় হও।আমি অসহায় দৃষ্টিতে সোহানের দিকে চেয়ে থাকলাম,কিন্তু সে অন্য দিকে নিজের দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলো।আমি অবাক হয়ে ভাবছি এই সেই সোহান নয় যাকে আমি সাত বছর আগে দেখেছি।তার চোখে আমি সেই প্রথম দিনের ভালোবাসা খুজে পাচ্ছি না।সত্যি কি তবে ভালোবাসার রং বদলায়
Post a Comment